ইয়ার টুয়েন্টি টুয়েন্টিকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিক কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। মুজিববর্ষের শুরুতে তাই বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিতে চলছে নানামাত্রিক বিশ্লেষণ ও আলোচনা।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি কমিটি সিডিপি গত পনের মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল ইকোসক মানদন্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে বারশো ত্রিশ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ষোলশো দশ মার্কিন ডলার।
মানবসম্পদ সূচকে ছেষট্টি প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে বাহাত্তর দশমিক নয়। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে বত্রিশ ভাগ বা এর কম সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে চব্বিশ দশমিক আট ভাগ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ – যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস।
সরকারের রুপকল্প দু্ হাজার একুশ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নেরপথে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ দু্ই হাজার একুশ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং দুই হাজার একচল্লিশ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের পঞ্চাশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এক উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখিয়েছে।
উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, একশোটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির তেতাল্লিশ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আটটি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য।
তাঁর মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা,
মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম।
শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম।
নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা।
বর্তমান ছাব্বিশ হাজার একশো তিরানব্বইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়েছে।উনিশো নব্বই সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল একষট্টি, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা সাতানব্বই দশমিক সাত ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, দুই হাজার বারো প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।’
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা- দুই হাজার এগারো।’ তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে বারো হাজার সাতশো উনআশি টি কমিউনিটি ক্লিনিক। তিনশো বারটি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে পঞ্চাশ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে দুই হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। উনিশো নব্বই সালে নবজাতক মৃত্যুর হার একশো উনপঞ্চাশ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে তিপান্নতে। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন বারোটি মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাতচল্লিশ হাজারেও বেশি জনশক্তি।
নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা- দুই হাজার এগারো।’ নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম।
সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ।
প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও।
‘জাতীয় শিশু নীতি- দুই হাজার এগারো’প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের চল্লিশটি জেলার সদর হাসপাতাল এবং বিশটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল।
দুঃস্থ, এতিম, অসহায় পথ শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে পনেরটি শিশু বিকাশ কেন্দ্র।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডে।
নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী।
ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে আশি শতাংশের এর উপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ।
দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের চার হাজার পাঁচশো পঞ্চাশটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল।
কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় পঁচিশ হাজার।
দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়।
টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা বারো কোটি সাইত্রিশ লক্ষ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা চার কোটি ছেচল্লিশ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।
সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং।
সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে।
ফোর জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ফাইভ জি এর প্রক্রিয়া চলছে।
কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে।
প্রায় ষোল কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মেট্রিক টন।
প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র সতোরটি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ করেছেন তিনটা। তাঁর এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত।
বর্তমানে বিশ্বের একশো সাতান্নটি দেশে বাংলাদেশের ছিয়াশি লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত।
স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল দুই হাজার চৌদ্দ পর্যন্ত বিশ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকগণ যেতে পেরেছে।
উনিশো আটাশি সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের উনচল্লিশটি দেশের চোষট্টিটি শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী একশো পনেরটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে।
বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ছয় হাজার তিনশো তেইশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা সাতচল্লিশ শতাংশ থেকে বাষট্টি শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দুইশো বিশ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে তিনশো আটচল্লিশ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে পঁয়ত্রিশ লক্ষ গ্রাহককে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন পয়ষট্টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ওষুধ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী।
বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি দুই হাজার তেরো- দু্ই হাজার চৌদ্দ অর্থবছরে বাংলাদেশের আইটি শিল্প দশ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের অর্জন হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দুই হাজার আট-দুই হাজার নয় সালে এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল তেরো হাজার আটশো পয়তাল্লিশ কোটি টাকা, বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ পঁচিশ হাজার তিনশো একাত্তর কোটি টাকা।
খানা আয় ব্যয় জরিপ, দুই হাজার দশ এর সমীক্ষায় দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার প্রায় চব্বিশ দশমিক পাঁচ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে পঞ্চান্নটি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট একুশটি জেলার একশো বায়ান্নটি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, দুই হাজার বারো এর খসড়া।’
মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযু্ক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ছয় বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।
বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সু্যোগ অনেক। সাম্প্রতিককালে, বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি বিনিয়োগে একটি সহায়ক ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু পুরাতন ব্যবসার সংস্কার করেছে।
দেশটিতে বিনিয়োগ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সহায়ক স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজমান।
বেসরকারি বাণিজ্য খাতের প্রবল আগ্রহের কারণেই বাংলাদেশ বাজার অর্থনীতি প্রবর্তনে দ্রুত বিভিন্ন কার্যকরী প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে।
ইতোমধ্যেই একটি মাঝারি মানের কিন্তু সুষম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক নীতির মূল ভিত্তি হলো সম্পদের উৎপাদন ও বণ্টনে প্রতিযোগিতামূলক বাজার অর্থনীতির ওপর আস্থা এবং বেসরকারি খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দূর করা।
সরকার ধাপে ধাপে শিল্প ও অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে নিজের সম্পৃক্ততা সরিয়ে বেসরকারি অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করছে। অর্থনৈতিক নীতিসমূহের ক্ষেত্রে সরকার দ্রুত সুনির্দিষ্ট সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন করেছে। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অনুঘটকের, কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রকের নয়। নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধকে ন্যূনতম একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সরকার সুষম গতিতে বাণিজ্য ক্ষেত্রে উদারীকরণ করেছে। শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা, যৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণ এবং রপ্তানী সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন সাধিত হয়েছে।
শিল্পহার কাঠামো ও আমদানি নীতির বিভিন্ন দিক সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসমূহের অদক্ষতা, সম্পদের অপব্যবহার প্রবণতা এবং পরিবর্তনশীল বাজার ও ভোক্তা চাহিদা নির্ধারণে অক্ষমতা সরকারকে ব্যাপকভিত্তিক বেসরকারিকরণ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে বাধ্য করেছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক ও আকর্ষণীয় প্রস্তাবসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
টেক্সটাইল, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য, রাসায়নিক ও পেট্রো কেমিক্যাল, কৃষি ভিত্তিক শিল্প, কাঁচা পাট, কাগজ, রেশম শিল্প, হিমায়িত খাদ্য বিশেষত চিংড়ি, পর্যটন, কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, সফটওয়্যার ও ডাটা প্রসেসিং এর মতো রপ্তানীমুখী শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও ভারী ও তথ্য প্রযুক্তির শিল্প প্রতিষ্ঠায়ও বিদেশি বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে যা দেশীয় আমদানি ব্যয় কমাতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশের কিছু বিদেশি বিনিয়োগ সুবিধা হলো- একশো ভাগ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ডিএফআই অথবা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাতে ইপিজেড যৌথ বিনিয়োগ অথবা এ এলাকার বাইরের বিনিয়োগ।
স্টক এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে পাবলিক কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের দ্বারা তালিকাভুক্ত বিনিয়োগ।
অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ যেমন বিদ্যুৎ খাত, তেল, গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধান, টেলিযোগাযোগ, বন্দর, সড়ক ও জনপথ।
সরাসরি প্রত্যক্ষ ক্রয় অথবা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় করা বেসরকারিকরণ প্রক্রি য়াধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এবং বেসরকারি ইপিজেড বিনিয়োগ।
বেসরকারি উদ্যোগে রপ্তানিমুখী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠায় দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য বিনিয়োগ বোর্ড দায়িত্বপ্রাপ্ত। সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহায়তা প্রদান করা এই বোর্ডের মূল লক্ষ্য। সরকার প্রধানের নেতৃত্বে পরিচালিত এ বোর্ডে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সচিবালয় এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিগণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এ বোর্ড ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বিনিয়োগ বোর্ড বিভিন্ন সেবা দেওয়ার সাথে সাথে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দ্রুত গতিশীল করতে বিশেষত শিল্পায়নকে শক্তিশালী করতে সরকার বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে একটি উন্মুক্ত নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তৃপক্ষ বেপজা দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও শিল্প স্থাপনে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং তাদের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছে।
গত চার বছরে ডিজিটাল অর্থনীতিতে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করে হুয়াওয়ের গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স দুই হাজার উনিশ এর টপ মুভার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
তালিকায় থাকা বাকি তিন দেশ হচ্ছে ইউক্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আলজেরিয়া।
দুই হাজার পনের সাল থেকে দুই হাজার উনিশ সাল পর্যন্ত ডিজিটাল অর্থনীতিতে সারা বিশ্বের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
গ্লোবাল কানেকটিভিটি ইনডেক্স জিসিআই ডিজিটাল বিকাশের উপর হুয়াওয়ের প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন।
এটি আইসিটি উদ্ভাবন এবং আইসিটি অ্যাপ্লিকেশনগুলি কীভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে বিকাশ লাভ করতে পারে এবং শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়, থিঙ্ক ট্যাঙ্কস এবং শিল্প সমিতিগুলির সঙ্গে ডিজিটাল অর্থনীতিতে মুক্ত গবেষণা পরিচালনা করে সেসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
এর লক্ষ্য হলো দেশ এবং শিল্পকে ডিজিটাল রূপান্তর সম্পর্কিত অনুমোদন, দিক নির্দেশনা, এবং এর অগ্রগতির সঠিক মূল্যায়ন পরিমাপগুলো তুলে ধরা।
দুই হাজার চৌদ্দ সাল থেকে হুয়াওয়ে প্রতি বছর সরবরাহ, চাহিদা, অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাবনা নামক চার ক্ষেত্রের চল্লিশটি সূচকের ভিত্তিতে একটি জিসিআই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
জিসিআই দুই হাজার উনিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরেরও কম সময়ের পথচলায় গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স বা বৈশ্বিক সুযোগ সূচকে সাত পয়েন্ট এগিয়েছে বাংলাদেশ। দু্ হাজার পনের সালের পর দেশটিতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর হার পাঁশ শতাংশ থেকে বেড়ে একচল্লিশ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর হার সাত শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে চৌত্রিশ শতাংশ। এছাড়াও মোবাইল ফোন ও বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রেও দেশটির তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা সবে ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগোচ্ছে, তারাও ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটিকে কাজে লাগিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি থেকে কেবল উন্নত দেশগুলোই লাভবান হবে- এমন নয়, বরং যে কোনো দেশ সম্ভাবনাময় নতুন এই খাতকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সামগ্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে।
জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রথম সারির দেশ, যারা ইতিমধ্যেই আইসিটি অবকাঠামোতে শীর্ষে অবস্থান করছে, তারাও সম্ভাবনাময় এই খাতকে পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করে উঠতে পারেনি। ফলে তাদেরও আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।
আর চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, ফিলিপাইন এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতেও একই সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও উন্নয়ন তারাও নিজ নিজ জায়গা থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি কাজে লাগিয়ে যে নতুনভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব, এটিই এবারের গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স’প্রতিবেদনের প্রধান পর্যবেক্ষণ। এতে দেখানো হয়েছে যে, গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স জিসিআই বা বৈশ্বিক সংযোগ সূচকে পঁয়ষট্টি এর বেশি নম্বর পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে যারা কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তিক সংযোগ খাতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ করেছে, তারা এক শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সক্ষম হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে বৈশ্বিক পর্যায়ে আমরা একে অন্যকে কতটা সহযোগিতা করতে পারছি, তার ওপর সামগ্রিক সাফল্য নির্ভর করছে বলেও এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অন্যতম প্রধান সঞ্চালক হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড, ক্লাউড এবং আইওটি’র মতো করে ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি গড়ে তোলা সম্ভব। প্রযুক্তির এই চারটি ধারার-ই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিজিটাল উন্নয়নে একটি দেশের অবস্থান যেখানেই থাক না কেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংযোগকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে সেখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো যায়, তা নিয়ে সে দেশের নীতি নির্ধারকদের এখনই ভাবা উচিত।
ডিজিটাল অর্থনীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে নীতি নির্ধারক ও স্টেকহোল্ডারদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা প্রদানের উদ্দেশ্যেই গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স বা বৈশ্বিক সংযোগ সূচক নকশা করা হয়েছে। এতে অংশ নেয়া উনআশিটি দেশ প্রবৃদ্ধির হিসাবে বিশ্বের পঁচানব্বই শতাংশ এবং জনসংখ্যার হিসাবে প্রায় চুরাশি শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রা এবং দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে এই সরকারের একটানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। শুরুতেই তিনি দেশবাসীকে নতুন খ্রিষ্টীয় বছরের শুভেচ্ছা জানান। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুই হাজার আঠারো সালের ত্রিশ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে গত বছরের সাত জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার চতুর্থবার শপথ নেওয়ার একবছর পূর্তি উপলক্ষে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি । কেবল আনুষ্ঠানিকতা করতে নয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চার করার লক্ষ্যেই মুজিবববর্ষ উদযাপন করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।
এর আগে, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের একবছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বিষয়টি গণমাধ্যমে জানানো হয়। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর গত বছরের পঁচিশ জানুয়ারি সবশেষ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণটি মুজিববর্ষে সরকারের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অনন্য মাইল ফলক।
তাই তার ভাষণটি এখানে সংযুক্ত করা হলো-
‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা বোনকে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সালাম জানাচ্ছি। আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি উনিশো পঁচাত্তর সালের পনের আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল – কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এএসআই সিদ্দিকুর রহমান-সহ সেই রাতের সকল শহীদকে।
এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। স্মরণ করছি দুই হাজার চার সালের একুশে এ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ বাইশ নেতা কর্মীকে। স্মরণ করছি ২দুই হাজার এক সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ একুশ হাজার নেতাকর্মীকে।
দুই হাজার তের থেকে দুই হাজার পনের সাল পর্যন্ত বিএনপি জামাত জোটের অগ্নি সন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমা হামলায় যাঁরা নিহত হয়েছেন আমি তাঁদের স্মরণ করছি। আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেছেন, আমি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। দুই হাজার বিশ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী সতের মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হবে। আমরা ইতোমধ্যেই দুই হাজার বিশ- দুই হাজার একুশ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি। দুই হাজার একুশ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে। এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।
প্রিয় দেশবাসী, দুই হাজার নয় সাল থেকে আমরা একটানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি । আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনা করছি । আর সে লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নসহ সকলের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের শোষণ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পোড়া মাটি নীতির ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত অকাঠামো ও অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উঠে এসেছিল। কিন্তু উনিশো পঁচাত্তর সালের পনের আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়।
পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলোর জনবিচ্ছিন্নতা, লুটপাট ও দর্শনবিহীন রাষ্ট্র পরিচালনা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিল ঝড়, জলোচ্ছাস এবং ভিক্ষুক দরিদ্র হাড্ডিসার মানুষের দেশ হিসেবে। আমরা একুশ বছর পর উনিশো ছিয়ানব্বই সালে যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় পঞ্চান্ন শতাংশ। উনিশো ছিয়ানব্বই- দুই হাজার একুশ মেয়াদে আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করি। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, তাঁদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি যেমন আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঘরে ফেরা, কম্যুনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মত কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কৃষক ও কৃষি বান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে দেশ দ্রুত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করে। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন খাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী নীতিমালা গ্রহণ করি যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। দেশ যখন আর্থিক স্থবিরতা কাটিয়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা শুরু করে, ঠিক তখনই দুই হাজার এক সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি জামাত আবার ক্ষমতায় আসে। রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন। একুশ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে বহু চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দেয়া হয়। হাওয়া ভবন খুলে অবাধে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট। তারই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি দুই হাজার সাত সালের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যে সরকার বিনা কারণে আমাকে প্রায় এক বছর কারাবন্দি রাখে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা দুই হাজার নয় সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি। বিএনপি জামাত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে এবং সেই সময়কার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হই। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি সুপরিচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার অর্জনের পাশাপাশি নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশিদেরই শুধু নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী, আমরা আপনাদের জন্য কী করতে চেয়েছিলাম আর কী করতে পেরেছি এ বিষয়ে আমরা সব সময়ই সচেতন। আপনারাও নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমরা মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা তা ই বলি, যা আমাদের বাস্তবায়নের সামর্থ রয়েছে। দুই হাজার আট সালের নির্বাচনের পূর্বে আমরা রূপকল্প দুই হাজার একুশ ঘোষণা করেছিলাম। যার অন্তর্নিহিত মূল লক্ষ্য ছিল দুই হাজার একুশ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। মাথাপিছু আয় বারশো মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক দুই হাজার পনের সালে বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দুই হাজার পাঁচ- দুই হাজার ছয় অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল পাঁচশো তেতাল্লিশ মার্কিন ডলার। দুই হাজার উনিশ সালে তা এক হাজার নয়শো নয় মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দুই হাজার পাঁচ- দুই হাজার ছয় অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল একচল্লিশ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ দশমিক পাঁচ শতাংশে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসেব মতে দুই হাজার দশ সালে দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল তিয়াত্তর দশমিত পাঁচ। দুই হাজার আঠারো সালে তা দশ দশমিক চার শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। দুই হাজার আঠারো সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশের প্রমাণ মেলে তার বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনায়। দুই হাজার পাঁচ-দুই হাজার ছয় অর্থবছরে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে বাজেটের আকার ছিল মাত্র একষট্টি হাজার কোটি টাকা। দুই হাজার উনিশ- দুই হাজার বিশ অর্থবছরে বাজেটের আকার সাড়ে আট গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ তেইশ হাজার একশো নব্বই কোটি টাকায়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ দুই হাজার সাতশো একুশ কোটি টাকায়। বাজেটের নব্বই ভাগই এখন বাস্তবায়ন হয় নিজস্ব অর্থায়নে।
গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ছিল আট দশমিক এক পাঁচ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ছিল ছয় শতাংশের নীচে। বছরের শেষ দিকে আমদানি নির্ভর পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ব্যতীত অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক ছিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ছোটোখাটো অভিঘাত এই অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফ এর হিসেব অনুযায়ী পিপিপি’র ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ত্রিশতম। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী দুই হাজার চল্লিশ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে তেইশ তম স্থান দখল করবে। এইচবিএসসি’র প্রক্ষেপণ অনুযায়ী দুই হাজার ত্রিশ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ছাব্বিশতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে দুই হাজার বিশ এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- এক উৎক্ষেপণ করেছি। পাবনার রূপপুরে চব্বিশো মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। মায়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার বিরোধ মীমাংসার ফলে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির উপর আমাদের স্বার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুলে গিয়েছে নীল অর্থনীতির দ্বার।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাংখিত উন্নয়ন অর্জনের জন্য আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা একুশো’ নামে শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। প্রিয় দেশবাসী, দশ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এদেশের মানুষ ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখা ভুলেই গিয়েছিল। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে আর সেই সেতু দিয়ে গাড়ি বা ট্রেনে সরাসরি পারাপার করতে পারবে – এটা ছিল মানুষের স্বপ্নেরও অতীত। আমরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। তিন ভাগের দুই ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রায় অর্ধেকাংশ এখন দৃশ্যমান। রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাতালরেল নির্মাণের সম্ভ্যাবতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
ঢাকা চট্টগ্রাম, ঢাকা ময়মনসিংহ, ঢাকা চন্দ্রা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পর চন্দ্রা বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন রংপুর এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে।
নূতন রেলপথ নির্মাণ, নতুন কোচ ও ইঞ্জিন সংযুক্তি, ই টিকেটিং এবং নূতন নূতন ট্রেন চালুর ফলে রেলপথ যোগাযোগে নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। দউ হাজার নয় থেকে এ পর্যন্ত চারশো এক কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। একশো বাইশটি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুর উপর দিয়ে রেল চলাচল শুরু হবে বল আশা করছি। দেশের সকল জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। বিমান বহরে ছয়টি নতুন ড্রিম লাইনার যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আঠারো’তে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পঁচানব্বই শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে। সাতানব্বই ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছেন। টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা ও মহেশখালিতে মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মহেশখালিতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক চয়শো পঞ্চাশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। কিশোর ও যুব সম্প্রদায়ের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম এবং অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। সাড়ে আঠার হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থসেবা আজ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে সুযোগ সুবিধা। স্থাপন করার হয়েছে হৃদরোগ, কিডনি, ক্যানসার, নিউরো, চক্ষু, বার্ন, নাক কান গলাসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনসটিটিউট ও হাসপাতাল। অব্যাহত নার্সের চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউট। বিগত এগারো বছরে বিশ হাজার একশো দুই জন নতুন চিকিৎসক এবং একশ হাজার হাজার ছয়শো সাতানব্বই জন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। খাদ্যশস্য, মাছ এবং মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান চতুর্থ এবং মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। কৃষি উপকরণের দাম কয়েক দফা হ্রাস করা হয়েছে। সর্বশেষ গতমাসে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি সারের দাম কেজি প্রতি নয় টাকা কমিয়ে কৃষক পর্যায়ে ষোল টাকা করা হয়েছে। ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রতি বছর দুই কোটি তিন লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপ বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। দুই হাজার দশ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত ছাব্বিশ হাজার একশো তিরানব্বইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ছয়শো পয়ষট্টি টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করেছি। দুই হাজার নয় থেকে এ পর্যন্ত চার হাজার ছয়শো একষট্টি টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার হার তিয়াত্তর শতাংশ অতিক্রম করেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দুই হাজার পাঁচ- দু্ই হাজার ছয় অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র তিনশো তিয়াত্তর কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চুয়াত্তর হাজার তিনশো সাতষট্টি কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ কোটি দশ লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কেউ যাতে গৃহহীন না থাকে সেজন্য আমরা একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভূমিহীন, নদীভাঙনে উদ্বাস্তুদের জন্যও ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে একশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে পনের কোটিরও বেশি সীম ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় নয় কোটি। দেশের পয়ত্রিশোর বেশি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা ফোর জির পর ফাইভ জি প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য তরুণ সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। চলতি মেয়াদে আমরা দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।
সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে একশোটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে পনেরটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগের জন্য আসছেন। সারাদেশে দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সারাদেশে ভকেশনাল এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। ফ্রি ল্যান্সিং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ছয় লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার আইটি খাতে নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, পর্যটন, সেবাখাতসহ অন্যান্য খাতে আত্ম কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রিয় দেশবাসী, আর্মড ফোর্সেস গোল দুই হাজার ত্রিশ এর আলোকে প্রতিটি বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বহিঃশত্রুর যে কোন আক্রমণ বা আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় আমরা তা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার রোধে আমাদের পুশিলসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। দেশবাসী এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব সময়ই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। জাতির পিতা প্রণীত পররাষ্ট্র নীতির সারকথা- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এর ভিত্তিতেই আমাদের পথচলা। বিশেষ করে প্রতিবেশিদের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আলোচনার মাধ্যমে আমরা দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধান করতে চাই। এটি আমাদের দুর্বলতা নয়, কৌশল। এ কারণেই মায়ানমারের দিক থেকে নানা উস্কানি সত্ত্বেও আমরা সে ফাঁদে পা দেইনি। আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের পথ থেকে সরে যাইনি। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মামলা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই আদালত থেকে আমরা একটি স্থায়ী সমাধান সূত্র খুঁজে পাবো।
আর্থ সামাজিক খাতে অব্যাহত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। যার সাক্ষ্য মেলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থনের মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি ইকোসক, সিএফসি, সিআইএপি, এপিডিআইএম সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে। এ বছরও জাতিসংঘে বাংলাদেশ উত্থাপিত শান্তির সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তন্তু ও টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক রেজুলেশনসহ রোহিঙ্গা বিষয়ক বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের স্মরণ আছে, গত বছর সরকার গঠনের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে আমি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শোধরানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যে কোন পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করবো না।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই- দুর্নীতিবাজ যে ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান থাকবে, যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের হক যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করছি। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির নির্মুল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। মানুষ সচেতন হলে, দুর্নীতি আপনা আপনি কমে যাবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যাতে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সেজন্য মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সারা দেশে ছয়শো পঞাশটি মজজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে হিংসা বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের রায়ই হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র উপায়। যে কোন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে, অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে আমরা বরদাশত করবো না। প্রিয় দেশবাসী আপনারা অতীতে আন্দোলনের নামে বিএনপি জামাতের অগ্নি সন্ত্রাস এবং মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা দেখেছেন। বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেয়া হবে না।
আমরা সংসদকে কার্যকর করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সরকারি, বিরোধীদলের সংসদ সদস্যগণের অংশগ্রহণ সংসদকে প্রাণবন্ত করেছে।
প্রিয় দেশবাসী, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হল। বিগত এক বছর আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। আমরা সবক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি তা দাবি করবো না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। অতীতের ভুল ভ্রান্তি এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সকলের সহযোগিতায় আমরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ। গত বছর দু’একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় দেইনি। জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোন কোন মহল গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। আমরা জনগণের সহায়তায় দ্রুত সেসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের সব সময়ই এ ধরনের গুজব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বর গত বছর সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু মূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে এই রোগে। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এডিস মশার বিস্তার রোধে আগে থেকেই সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি।
প্রিয় দেশবাসী,
সাধারণ মানুষকে ঘিরেই আমার সকল কার্যক্রম। আপনাদের উপর আমরা পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ অসাধারণ পরিশ্রমী এবং উদ্ভাবন ক্ষমতাসম্পন্ন।
যে কোন পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁরা নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। অল্পতেই সন্তষ্ট এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এসব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাঁর কন্যা হিসেবে আমার জীবনেরও একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই।
প্রিয় দেশবাসী, বাঙালি জাতি বীরের জাতি। ত্রিশ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। এমন জাতি পৃথিবীতে কোনদিন পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমরাও আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আসুন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা দল মত নির্বিশেষে সকলে মিলে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন করে শপথ নেই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক ।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণেও এই সরকারের পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন চিত্র উঠে আসেনি। সরকারের উন্নয়ন মহাযজ্ঞে যে ১০ টি উন্নয়ন মহাপ্রকল্প রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানা দরকার। এগিয়ে চলছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাতে নেওয়া সরকারের দশ প্রকল্পের কাজ। এগুলো হলো পদ্মাসেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, এলএনজি টার্মিনাল, ঘুমধুমে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডি। সেই প্রতিবেদন অনুসারে পদ্মাসেতুর অগ্রগতি হয়েছে চৌষট্টি শতাংশ, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি ছিয়ানব্বই শতাংশ, মেট্রোরেলের অগ্রগতি চৌদ্দ দশমিক বাষট্টি শতাংশ, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি আট শতাংশ, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি উনপঞ্চাশ দশমিক সাতানব্বই শতাংশ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি সতেরো দশমিক চৌষট্টি শতাংশ, পায়রা সমুদ্র বন্দরের অগ্রগতি উনপঞ্চাশ দশমিক সাতানব্বই শতাংশ, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগের ভৌত অগ্রগতি এগারো শতাংশ, রামু মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে পাঁচ শতাংশ। পদ্মাসেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ মাস পর্যন্ত শেষ হয়েছে সেতুটির উনষাট শতাংশ ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ছিল আটান্ন শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে এক শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া পদ্মা নদী শাসন কাজ হয়েছে ছত্রিশশ দশমিক পঞ্চাশ শতাংশ। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ হয়েছে নিরানব্বই দশমিক পঁচাশি শতাংশ ও মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া দুই এর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে তিপান্ন শতাংশ। আটাশ হাজার সাতশো তিরানব্বই কোটি উনচল্লিশ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে পনের হাজার একশো পঁচিশ কোটি একুশ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের বায়ান্ন দশমিক তিপান্ন শতাংশ।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ তের হাজার বিরানব্বই কোটি একানব্বই লাখ টাকা। শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে সাত হাজার পাঁচশো সত্তর কোটি ষোল লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ছয় দশমিক উনসত্তর শতাংশ।
রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দুটি চুক্তির আওতায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
প্রকল্পের আওতায় তেরশো মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিটের মাধ্যমে চব্বিশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।
প্রকল্পের মূল কাজ প্রথম রিয়্যাক্টর স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য ভবন তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় কাজের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পচানব্বই দশমিক বিরাশি অগ্রগতি হয়েছে।
শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে চার হাজার আটশো চুয়াত্তর কোটি একান্ন লাখ টাকা।
মেট্টোল প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে দৌদ্দ দশমিক বাষট্টি শতাংশ। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে একুশ হাজার নয়শো পঁচাশি কোটি সাত লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার দুইশো কোটি ছাব্বিশ লাখ টাকা।
এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ এক এর অগ্রগতি একশো শতাংশ, কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ দুই এর অগ্রগতি হয়েছে চার শতাংশ, কন্ট্রাক প্যাকেজ তিন এর অগ্রগতি পাচ শতাংশ, কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ আট এর অগ্রগতি নয় শতাংশ।
এ ছাড়া প্যাকেজ- চার পাচ ছয় সাত এর কন্ট্রাক্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, মতিঝিল পর্যন্ত লাইন স্থাপন করা হবে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে আট শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি পনের দশমিক পঞ্চান্ন শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শকরা কাজ শুরু করেছেন। মাটি ভরাটের কাজ একশো শতাংশ, সীমানা প্রাচীর নির্ধারণের কাজ আটানব্বই শতাংশ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ষোল হাজার কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে দুই হাজার চারশত আটাশি কোটি তিপান্ন লাখ টাকা।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে সতেরো দশমিক চৌষট্টি শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে তের দশমিক বিরানব্বই শতাংশ। প্রকল্পের জন্য দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ।
এ ছাড়া ওনারস ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ এবং জমি সংক্রান্ত দায়িত্ব, বাউন্ডারি ফেন্সিংয়ের কাজ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্সের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে পঁয়ত্রিশ হাজার নয়শো চুরাশি কোটি ছেচল্লিশ লাখ টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার নয় কোটি পঁচানব্বই লাখ টাকা।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর এ বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক হাজার একশো আটাশ কোটি তেতাল্লিশ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ, ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, সার্ভে বোট, পাইট ভ্যাসেল ইত্যাদি কেনা হচ্ছে।
মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে চয়শো পঞ্চান্ন কোটি দশ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি আটান্ন দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং সার্বিক ভৌত অগ্রগতি উনপঞ্চাশ দশমিক সাতানব্বই শতাংশ।
পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে এগারো শতাংশ। এ ছাড়া আর্থিক অগ্রগতি ছয় দশমিক একত্রিশ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে চৌত্রিশ হাজার নয়শো আটাশি কোটি ছিয়াশি লাখ টাকা।
মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে দুই হাজার পাঁচশো ছাপ্পন্ন কোটি চব্বিশ লাখ টাকা। আগামী আঠাশে এপ্রিল চীনের সঙ্গে এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এ প্রকল্পটি বিল্ড অন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার বিওওটি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
গত বছরের আঠারো জুলাই টার্মিনাল ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে।
বর্তমানে ডিজাইনের কাজ চলছে।
সেই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
রামু মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ: এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে পাঁচ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ষোল দশমিক আটত্রিশ শতাংশ।
কক্সবাজার এলাকায় জমি পাওয়া গেলেও চট্টগ্রামে জমি পাওয়া যায়নি।
পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। লট এক ও লট দুই এর কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
রিস্যাটেলমেন্টের জন্য এনজিও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে আঠারো হাজার চৌত্রিশ কোটি আটচল্লিশ লাখ টাকা। মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে দুই হাজার নয়শো চুয়ান্ন কোটি সাতচল্লিশ লাখ টাকা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ’ খাত দশ প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
রূপকল্প একুশ সামনে রেখে এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন হলে দেশের আর্থ সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক রচিত হবে বলে মনে করছে সরকার।
একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে।
এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে-একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, আশ্রয়ণ, শিক্ষা সহায়তা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বিকাশ।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে নেয়া এই দশ কর্মসূচীকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচনে দক্ষতা অর্জনে আয়বর্ধক কর্মসূচী হিসেবে নেয়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে এগিয়ে নেয়া এবং দেশী বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়ন।
এছাড়া দেশী বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে দেশে বিনিয়োগের খরা কাটবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
‘বিনিয়োগ বিকাশ’ বহির্বিশ্বে এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা হবে যাতে বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগ এগিয়ে আসেন।
এছাড়া দেশী উদ্যোক্তাদেরও আস্থা ফিরিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে এই দশ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার।
এই কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়ন ও ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে রূপকল্প একুশ এর স্বপ্নপূরণ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার ও বিভিন্ন গণমুখী উদ্যোগের মধ্যে এই দশ ক্ষেত্রকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মনে করছে, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং এসডিজি অর্জনে এসব খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
এ সম্পর্কিত প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের এসডিজি মূল ভাবনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সার্বজনীন মানব উন্নয়ন চিন্তার ব্যাপক মিল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ভাবনা কার্যকরভাবে উপস্থাপন করে সকল কর্মকান্ডে বিভিন্ন স্তরের নাগরিকগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে একুশ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
এদিকে, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিনিয়োগের প্রধান বাধাগুলো কি তা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এসব বাধা দূর করে দেশী বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় শিল্পনীতিও বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে।
এছাড়া ভারত, চীন, জাপান ও কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে ওই দেশগুলোর জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন।
এছাড়া দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ত্রিশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী পনের বছরে সারাদেশে একশোটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর ফলে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে অতিরিক্ত চল্লিশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় এক কোটি মানুষের।
চলমান মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনাল।
পদ্মা বহুমুখী সেতু বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ বহুল প্রত্যাশিত এ প্রকল্পটির সর্বশেষ নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে আটাশ হাজার সাতশো তিরানব্বই কোটি টাকা।প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির বত্রিশ শতাংশ অগ্রগতি হয়। আগামী অর্থবছরে এর জন্য ছয় হাজার চাব্বিশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পদ্মা রেলসেতু সংযোগ দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রায় পয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প দুই হাজার বাইশ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। প্রকল্পটির জন্য দুই শতাংশ সুদে বিশ বছর মেয়াদে চীন থেকে চব্বিশ হাজার সাতশো উনপঞ্চাশ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা রয়েছে।
একশো বায়াত্তর কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা খুলনা পথে একশো একুশ, ঢাকা যশোর পথে একশো চুরাশি এবং ঢাকা দর্শনা পথে দূরত্ব কমবে চুয়াল্লিশ কিলোমিটার। প্রকল্পের জন্য নতুন বাজেটে চার হাজার একশো দুই কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দোহাজারি রামু কক্সবাজার গুনদুম রেলপথ পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে গৃহীত প্রকল্পটির ব্যয় আঠারো হাজার তিনশো চার কোটি টাকায় উন্নীত করে সম্প্রতি সংশোধন করেছে সরকার।
দুই হাজার বাইশ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ দুই হাজার আঠারো সালের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পটির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এডিবি তের হাজার একশো পনের কোটি টাকা দেওয়ার কথা।
আগামী অর্থবছরে এর জন্য বরাদ্দ থাকছে ছয়শো একত্রিশ কোটি টাকা। দুই ধাপে একশো উনত্রিশ দশমিক পাচশো তিরাশি কিলোমিটার রেলপথ হওয়ার কথা এ প্রকল্পে।
মেট্রোরেল মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা আছে একুশ হাজার নয়শো পঁচাশি কোটি টাকা। সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পে পাঁচ হাজার তিনশো নব্বই কোটি টাকা ও জাপান ষোল হাজার পাঁচশো আটনব্বই কোটি টাকা যোগান দেবে। দুই হাজার চব্বিশ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। আগামী অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য দুই হাজার হাজার দুইশো সাতাশ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পায়রা সমুদ্রবন্দর দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অনগ্রসরতা, আমদানি বৃদ্ধি এবং বন্দরের ভবিষ্যৎ ধারণ ক্ষমতা বিবেচনায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। দেশের তৃতীয় এ বন্দর নির্মাণে দুই হাজার তেরো সালের নভেম্বরে জাতীয় সংসদে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন নামের একটি আইন পাস হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার তেরো সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এক হাজার একশো চুয়াল্লিশ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ড্রেজিং কার্যক্রমে যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য দুইশো কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে এক লাখ তেরো হাজার বিরানব্বই কোটি একানব্বই হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাশিয়া প্রকল্প ব্যয়ের নব্বই শতাংশ ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে দিচ্ছে। অবশিষ্ট দশ শতাংশ জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।
মাতারবাড়ী বারশো মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ছয়শো মেগাওয়াট করে দুটি কেন্দ্রের মাধ্য মোট এক হাজার দুইশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেওয়া। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে পঁয়ত্রিশ হাজার নয়শো চুরাশি কোটি টাকা, যার মধ্যে জাপান দেবে আঠাশ হাজার নয়শো উনচল্লিশ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য দুই হাজার চারশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চৌদ্দ হাজার নয়শো নিরানব্বই কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে এক হাজার তিনশো বিশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা এই প্রকল্পে। নতুন অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য দুই হাজার চারশো চল্লিশ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে। বন্দরটি হলে তা প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য ব্যবহার করতে পারবে। সরকার মনে করে, বন্দরটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে।
প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে জি টু জি ভিত্তিতে এ বন্দর নির্মাণে চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও দুবাইয়ের চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করেছে।এলএনজি টার্মিনাল সাংগু গ্যাস ক্ষেত্র শেষ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সংকট বিরাজ করছে।
এ সংকট নিরসনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে মহেশখালী উপকূলে দৈনিক পঞ্চাশ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টার্মিনাল হবে। টার্মিনাল থেকে মূল ভূখণ্ডে গ্যাস আনতে একানব্বই কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
এই রকম হাজারো প্রকল্প ও উদ্যোগের মত এই সরকারের চারবারের উন্নয়নের সাথে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শায় তার কাজ আর দেশের জন্যে নিজের জীবন ও পরিবারের জীবন বিলিয়ে দেওয়ার ঋণের দায় বাঙালি জাতী কি কোনদিন শোধ করতে পারবে? ডিজিটাল দেশ আর মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন ও সমুদ্র সীমা জয় করে ব্লু ইকনোমির মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় মুজিববর্ষে বাংলাদেশ।