রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় আবু বকরের মৃত্যুর ঘটনায় ওসির ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সকাল ১০টায় এফডিসির মূল ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। অবরোধের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা হাতিরঝিল থেকে কারওয়ান বাজার সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকালে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, আবু বকরের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এমনকি তার মাথায় এবং পায়েও দাগ রয়েছে। হিস্ট্রোপ্যাথলজিক্যাল এবং ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। এফডিসির সামনে বিক্ষুব্ধ সহকর্মীরা জানান, বিএফডিসির ফ্লোর ইনচার্জ ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক বাবু। শনিবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে পুলিশ তাকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। আবু বকরকে হত্যার পর থানায় মামলা করা হয় তড়িঘড়ি করে। আমরা আমাদের সহকর্মীর রহস্যময় মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। বিএফডিসির কর্মচারী ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজা বেগম বলেন, কেন আবু বকরকে থানা হেফাজতে মরতে হলো? আমরা দোষীদের শাস্তি চাই। তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে শনিবার, কিন্তু যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে সেটা হয়েছে এক দিন পর (রবিবার)। থানায় কম্বল পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে আবু বকর। কিন্তু তার গলায় একটা চিকন দাগ রয়েছে। তার মানে এটা পরিকল্পিত হত্যা। জামাল শেখ বলেন, থানার কাস্টডিতে ফাঁস দেবার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। তারপরও কীভাবে সে গলায় ফাঁস নিল? বিক্ষোভ শেষে এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের প্রজেকশন হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এফডিসির ভারপ্রাপ্ত এমডি নুজহাত ইয়াসমিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা থানা হেফাজতে থাকা আবু বকর সিদ্দিক বাবুর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এফডিসির ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, এটা একটা সেনসিটিভ ইস্যু। আমরা অপেক্ষা করছি ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য। সেটা হাতে এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে এফডিসিতে নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। রবিবার ভোরে শিল্পাঞ্চল থানা হাজতখানা থেকে আবু বকর সিদ্দিক বাবুর (৪৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের সাবেক স্ত্রী আলেয়া ফেরদৌসী বলেন, শনিবার তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে বাবুকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ওই সময় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। রবিবার পুলিশ বলে, বাবু ঢামেক হাসপাতালে রয়েছেন। হাসপাতালে এসে তার মৃতদেহ দেখতে পাই। তিনি বলেন, মায়া নামে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বাবুর। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর থেকে উভয়ই আলাদা থাকত। ফেরদৌসী বলেন, বাবুর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমি বাবুর হত্যার বিচার চাই। অপর একটি সূত্র জানায়, বাবুর কাছ থেকে মায়া মোটা অঙ্কের টাকা লোন নেয়। বাবু টাকা ফেরত চাইলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ সময় মায়া পুলিশের সাহায্য নেয়। পুলিশ বাবুকে একবার গ্রেফতার করেও পরে ছেড়ে দেয়। মায়া আবারও পুলিশকে জানায়, পুলিশ শনিবার গ্রেফতার করে বাবুকে। এরপর বেধড়ক পেটায়। পরে বাবুর মৃত্যু হলে মায়াকে দিয়ে একটি মামলা করানো হয়। থানা পুলিশের দাবি, ধর্ষণ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছিল এসআই জুয়েল। হাজতখানায় গলায় ফাঁস নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের অভিযোগ, থানায় নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে, গতকাল সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে যান। শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, থানা হেফাজতে কোনো ব্যক্তির আত্মহত্যার দায় পুলিশ এড়াতে পারে না। পুলিশ হেফাজতে আসামির আত্মহত্যার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে গাফিলতির প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।